জনাব এ কে এম আনোয়ারুল ইসলাম-এর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি।

জনাব এ কে এম আনোয়ারুল ইসলাম।
জনাব এ কে এম আনোয়ারুল ইসলাম ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন বাংলাদেশ বেতার, রাজশাহী কেন্দ্রে অনুষ্ঠান ঘোষণায় কন্ঠস্বর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে “খ” শ্রেণীর ঘোষকের মর্যাদা পান। এস এস সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর পরই তিনি ঘোষণার দায়িত্ব পালন শুরু করেন। শুরু হয় তাঁর বেতার জীবন।
অনুষ্ঠান উপস্থাপনার পাশাপাশি তিনি রেডিও ম্যাগাজিন স্পন্দন উপস্থাপনাসহ নানাধরনের বিশেষ অনুষ্ঠান উপস্থাপনা যেমন: কবিতা আবৃত্তি, নাটকে অভিনয়, সংবাদ পাঠ এবং মঞ্চ অনুষ্ঠান উপস্থাপনা নিয়ে অত্যন্ত কর্মব্যস্ত সময় অতিক্রম করতেন। উপস্থাপনা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশ নিয়ে সাফল্যের সাথে কৃতকার্য হন। কয়েক দফা মাসিক নির্ধারিত চুক্তিপত্রের আওতায় রাজশাহী কেন্দ্রে দীর্ঘ তেইশ বছর দায়িত্ব পালন শেষে পারিবারিক প্রয়োজনে ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে তিনি স্থায়ীভাবে ঢাকায় বসবাস করতে শুরু করেন এবং একই সাথে ঢাকা বেতারে কর্মজীবন শুরু করেন।
১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি বাংলাদেশ বেতারের হোম সার্ভিস, বাণিজ্যিক কার্যক্রম, বর্হিবিশ্ব কার্যক্রম, জনসংখ্যা স্বাস্থ্য পুষ্টি সেল এবং ট্রান্সক্রিপসন সার্ভিস নৈমিত্তিক উপস্থাপক হিসেবে কাজ শুরু করেন। বাণিজ্যিক কার্যক্রমে গানের ডালি গ্রন্থনা ও উপস্থাপনার দায়িত্ব পান তিনি শুরু থেকেই। এ দায়িত্বের পাশাপাশি তিনি “মন ছুয়ে যায়” অনুষ্ঠানের গ্রন্থনা ও উপস্থাপনার দায়িত্বও পালন করেছেন দীর্ঘদিন। মন ছুয়ে যায়, ঢাকা-খ থেকে প্রতি মঙ্গলবার সকাল ১০ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত প্রচারিত হতো। এ ছাড়াও তিনি ঢাকা-ক থেকে প্রতি শুক্র ও শনিবার সৈনিক ভাইদের জন্য জাতীয় অনুষ্ঠান দূর্বার উপস্থাপনা করেছেন দীর্ঘদিন।
জনাব আনোয়ার ২৬শে মে ২০০৫ খ্রিস্টাব্দ সকালে প্রথম “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” বলে বাংলাদেশ বেতার, ট্রাফিক সম্প্রচার কার্যক্রমের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এই দিন থেকেই তিনি এফ এম উপস্থাপনায় বৈচিত্র্য আনতে দিন-রাত কাজ করতে শুরু করেন। বিভিন্নভাবে অতীত অভিজ্ঞতাকে তিনি কাজে লাগিয়েছেন এবং এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ঐকান্তিক সহযোগিতাকে তিনি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
জনাব আনোয়ার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত এবং দুই পুত্র সন্তানের জনক। জনাব আনোয়ার অত্যন্ত হাসিখুশি এবং সুখী মানুষ ছিলেন। তিনি বলতেন “বেতারই আমার জীবন, আমার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত” । দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছর ধরে বেতার উপস্থাপনাকেই তাঁর ধ্যান জ্ঞান বলে বিশ্বাস করতেন। বেতার স্মৃতির ভান্ডারে তার সাথে জড়িয়ে আছে অনেক স্মরণীয় ঘটনা। অগ্রজদের সম্মানের সাথে স্মরণ করে তিনি বলেছেন, “যাদের কাছে শিখেছি, তাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধার শেষ নেই!” অন্যদিকে, যারা নবাগত তাদের চলার পথকে মসৃন করার ক্ষেত্রে তিনি সদা প্রস্তত থাকতেন। নিজ কর্মক্ষেত্র, সম্পর্কে তিনি বলতেন, “জীবনের শেষ দিনেও আমি মাইক্রোফোনে দায়িত্ব পালন করতে চাই”।
৬ই অক্টোবর ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ তারিখ, বাংলাদেশ বেতারের গুণী উপস্থাপক জনাব এ কে এম আনোয়ারুল ইসলামের মৃত্যুতে তাঁর প্রতি জানাই আমাদের গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
[ভিডিও ক্লিপটির ধারা বর্ণনা করেছেন মাহবুব সোবহান, শব্দ গ্রহণ ও শব্দ সম্পাদনা করেছেন মোঃ লিয়াকত হোসেন, ভিডিও সম্পাদনা করেছেন দেওয়ান মোহাম্মদ আহসান হাবীব।]
-ট্রাফিক সম্প্রচার কার্যক্রম, বাংলাদেশ বেতার। ৬ অক্টোবর ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ।