আজ মহান মে দিবস
আজ খ্রিস্টীয় বর্ষ পরিক্রমায় মে মাসের ১ তারিখ। আজ মহান মে দিবস। ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের একদল শ্রমিক দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করার জন্য আন্দোলন শুরু করেন, এবং তাদের এ দাবী কার্যকর করার জন্য তারা সময় বেঁধে দেয় ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দের ১লা মে। মূলত, ১৮৮৬ খ্রিস্টার্দের ১লা মে শিকাগোর রাস্তায় সংঘটিত ঘটনা ও পরবর্তী ঘটনাবলি থেকে এই দিবসের উৎপত্তি।
আট ঘণ্টার শ্রমদিবস, মজুরি বৃদ্ধি, কাজের উন্নততর পরিবেশ -এসব দাবিতে ১লা মে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক সংগঠনসমূহ ধর্মঘটের ডাক দেয়। বর্বর পন্থায় সে ধর্মঘট দমন করা হয়। মে মাসের ৩ তারিখ ধর্মঘটি শ্রমিকদের এক প্রতিবাদ সমাবেশে পুলিশের গুলিবর্ষণে ৬ জন শ্রমিক প্রাণ হারায়। এর ফলস্বরূপ পরদিন ৪ঠা মে হে মার্কেটে শ্রমিকরা প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হলে কারখানার মালিকরা সেখানে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় এবং তাতে ৪ জন শ্রমিকের প্রাণহানি ঘটে। ধর্মঘট সংঘটিত করার দায়ে অগাস্ট স্পাইস নামে এক শ্রমিক নেতাকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে, ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ই জুলাই ফ্রান্সের প্যারিস নগরীতে অনুষ্ঠিত আর্ন্তজাতিক শ্রমিক সমাবেশে ১লা মে শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষিত হযয় । মূলত এর পরের বছর থেকে বিশ্বব্যাপী এ দিনটি পালিত হয়ে আসছে। জাতিসংঘের একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক শাখা হিসেবে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) প্রতিষ্ঠার মধ্য দিযয় শ্রমিকদের অধিকারসমূহ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি লাভ করে। আইএলও কতগুলি নিয়মকানুন প্রতিষ্ঠা করে এবং সকল দেশে শিল্পমালিক ও শ্রমিকদের তা মেনে চলার আহবান জানায় এবং এভাবে শ্রমিক ও মালিকদের অধিকার সংরক্ষণ করে। বাংলাদেশ আইএলও কর্তৃক প্রণীত নীতিমালায় স্বাক্ষরকারী একটি দেশ।
শ্রমের কথা বলতে গিয়ে বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছেন – “ A hard working street-cleaner is a better man than a lazy scholar.” অর্থাৎ “একজন পরিশ্রমি রাস্তার ক্লিনার অলস পন্ডিতের চেয়ে ভালো।” শ্রমের বিপরীত নাম হলো শ্রমবিমুখতা বা আলস্য। শ্রমবিমুখতায় কোনো আনন্দ নেই, আছে লজ্জা। ব্যর্থতাই শ্রম বিমুখতার চূড়ান্ত ফলাফল। বাংলায় একটি প্রবাদ আছে – “পরিশ্রমে ধন আনে, পুন্যে আনে সুখ। আলস্যে দারিদ্রতা আনে, পাপে আনে দুখ।
আমাদের সমাজে শ্রমিকরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। শ্রমিকের স্বার্থ ও কল্যাণের দিকটি অবহেলা করে তাই, সমাজের টেকসই উন্নতি সম্ভব নয়। মহান মে দিবসের এই সুন্দর সকালে আমরা আমাদের দেশের সকল শ্রমজীবি মানুষের প্রতি জানাই আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।