বিশ্ব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস।
প্রিয় শ্রোতা, আজ ৮ই মে। বিশ্ব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস। রেড ক্রস সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা জন হেনরি ডুনান্ট ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই মে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। এই মহান নেতাকে স্মরণ করার জন্য প্রতিবছর তার জন্ম দিনটিকে বিশ্ব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস হিসেবে সারা বিশ্বে উদযাপন করা হয়। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিও বিশ্বের অন্যান্য জাতীয় সোসাইটির ন্যায় যথাযথ গুরুত্ব ও মর্যাদার সঙ্গে দিবসটি পালন করে থাকে। প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের কারণে এ বছর দিবসটি ব্যাপক আয়োজনের পরিকল্পনা থাকলেও তা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।
১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে ইতালির সালফেরিনোতে ফ্রান্স ও অস্ট্রিয়ার মধ্যে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ সংগঠিত হয়। ১৬ ঘন্টা বিরতিহীন এ যুদ্ধে চল্লিশ হাজার সৈন্য হতাহত হয়। আহতরা যুদ্ধক্ষেত্রে বিনা চিকিৎসায় অসহ্য যন্ত্রনায় ছটফট করছিল। এ সময় যুবক হেনরি ডুনান্ট ফ্রান্সের তৃতীয় নেপোলিয়নের সাথে দেখা করতে যাচ্ছিলেন। উদ্দেশ্য, আলজেরিয়ার সঙ্গে একটা চুক্তির ব্যাপারে ফ্রান্সের অধিপতি নেপোলিয়নের সাহায্য চাওয়া। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রের ভয়াবহ দৃশ্য, আহতদের আর্তচিৎকার ও যন্ত্রণা হেনরি ডুনান্টের গতি স্তব্ধ করে দেয়। তিনি পার্শ্ববর্তী গ্রামবাসীদের সংগঠিত করে আহতদের চিকিৎসায় নেমে পড়েন। সেদিন হেনরি ডুনান্টের আহবানে যারা চিকিৎসা সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন তারা রেড ক্রসের প্রথম স্বেচ্ছাসেবক। এদের মধ্যে অধিকাংশ ছিলেন মহিলা। যুদ্ধের ভয়াবহতার আবেগময় বিবরণ ও প্রতিকারের উপায় নিয়ে হেনরি ডুনান্ট ‘এ মেমরি অব সলফোরিনো’ নামক গ্রন্থ রচনা করেন। গ্রন্থটিতে তিনি শত্রæবন্ধু নির্বিশেষে আহতদের সেবার জন্য সেবা সংস্থা গঠনের আহবান জানান। ১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দে জন হেনরি ডুনান্ট জেনেভার বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিককে নিয়ে একটি সংগঠন গড়ে তুলেন। পরবর্তীতে এই সংগঠনই আন্তর্জাতিক রেড ক্রস বা ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব রেড ক্রস সংক্ষেপে আইসিআরসি নামে পরিচিতি পায়। রেড ক্রস আন্দোলনের জন্য ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে জন হেনরি ডুনান্ট শান্তিতে নোবেল পুরুষ্কার লাভ করেন। ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দে মহান এই ব্যক্তিত্ব মৃত্যবরণ করেন।
১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেড ক্রস সোসাইটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে তেহরানে অনুষ্ঠিত রেড ক্রস সম্মেলনে বাংলাদেশ রেড ক্রস সোসাইটি পূর্ণ স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এক আদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেড ক্রস সোসাইটির নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি রাখেন, তখন থেকে রেড ক্রসের পরিবর্তে রেড ক্রিসেন্টের প্রতীক ব্যবহার শুরু হয়। পৃথিবীর দেশে দেশে যুদ্ধ, দাঙ্গা, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্লান্তিহীন ভাবে কাজ করে চলছে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি। রেড ক্রস কমিটির সদস্য ও কর্মচারীদের নিষ্ঠা, অধ্যবসায় এবং স্বার্থত্যাগ বহু মানুষকে জীবন দিয়েছে, নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে। পৃথিবীর অনেক ধনী ব্যক্তি মানবতাবাদী এই প্রতিষ্টানকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করে থাকেন। পৃথিবীতে যে ভাবে যুদ্ধ, হানাহানি বাড়ছে, সেভাবেই গুরুত্ব বাড়ছে রেড ক্রসের। রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র বা রাজনৈতিক কোন বিভেদ করে না। যে কোন ব্যক্তির কষ্ট উপশমের চেষ্টাতেই ব্রতি এই প্রতিষ্টান দুটি। এখানে বেশি গুরুত্ব পায় শুধু তারাই যাদের সাহায্যের প্রয়োজন অন্যদের থেকে বেশি। আর্ন্তজাতিক রেড ক্রস ও রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি বিশ^ব্যাপি তাদের কার্যক্রম-এর জন্য এ পর্যন্ত তিন বার নোবেল শান্তি পুরুষ্কারে ভূষিত হয়।
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবক ও কর্মীরা বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় আমাদের দেশে সম্মুখ সারির যোদ্ধা হিসেবে কাজ করছে। তাদের এই কার্যক্রম মানবতার সেবায় আগ্রহী নতুনদেরও অনুপ্রাণিত করবে। আজকের এই দিনে আমরা বিশে^র সকল প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা সকল স্বেচ্ছাসেবক এবং মানব কল্যাণে নিয়োজিত কর্মীদের প্রতি জানাই আমাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা।