উদ্ভাবনী কার্যক্রম “বাউল”

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ইনোভেশন কার্যক্রমের আওতায় ২০২০-২১ অর্থ বছরে বাংলাদেশ বেতার, ট্রাফিক সম্প্রচার কার্যক্রম “Bangladesh Betar Audio Library” সংক্ষেপে “BBAuL” ডাটাবেজ সিস্টেম উদ্ভাবন করেছে। বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক জনাব আহম্মদ কামরুজ্জামান মহোদয়ের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ বেতারের সদর দপ্তরের সভা কক্ষে গত ২৪ জুন ২০২১ খ্রিস্টাব্দ তারিখ “বাউল” উদ্ভাবনী কার্যক্রমটি প্রদর্শন করা হয়। সভায় বাংলাদেশ বেতারের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অনুষ্ঠান) এবং উপমহাপরিচালক (বার্তা) সহ বেতারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ট্রাফিক সম্প্রচার কার্যক্রম, বাংলাদেশ বেতারের পরিচালকের দৈনন্দিন দায়িত্বে কর্মরত জনাব রওনক জাহান, আঞ্চলিক পরিচালক অনুষ্ঠানের মান উন্নয়নে দপ্তরের গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম সভায় তুলে ধরেন এবং আশাবাদ ব্যক্ত করেন সফলভাবে চলমান কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারলে আগামী দিনে ট্রাফিক সম্প্রচার কার্যক্রমের জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পাবে। সভায় “বাউল” ডেটাবেজটি উপস্থাপন করেন জনাব দেওয়ান মোহাম্মদ আহসান হাবীব, উপপরিচালক, বাংলাদেশ বেতার।
বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক জনাব আহম্মদ কামরুজ্জামান মহোদয় প্রদর্শনী সভায় “বাউল” উদ্যোগটির সফলতা কামনা করেন এবং ভবিষ্যতে উদ্যোগটিকে বেতারের সকল শাখার সমন্বয়ে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহ প্রদান করেন। অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অনুষ্ঠান) জনাব সালাহউদ্দিন আহমেদ মহোদয় উদ্যোগের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন এবং আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, এই উদ্যোগের সফল বাস্তবায়নে ট্রাফিক সম্প্রচার কার্যক্রম ভবিষ্যতে আরো জনপ্রিয়তা লাভ করবে। তিনি এই উদ্যোগের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।

“বাউল” ডেটাবেজটির উন্নয়নের সাথে বাংলাদেশ বেতারের অসংখ্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তা যুক্ত রয়েছেন। সম্মানিত সকল কর্মকর্তাবৃন্দ দাপ্তরিক দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন, যার ফলশ্রæতি হলো বাউলের আজকের অবস্থান। এ প্রসঙ্গে “বাউল” টিম বিনয়ের সাথে স্মরণ করেন ট্রাফিক সম্প্রচার কার্যক্রম, বাংলাদেশ বেতারের বিগত দিনের সকল পরিচালক স্যারদের বিশেষ করে সর্বজনাব আনোয়ার হোসেন মৃধা, শেখ মুহাম্মদ রেফাত আলী, মির শাহ আলম, এসএম আবুল হোসেন, এসএম জাহিদ হোসেন, মোঃ ছালাহউদ্দিন মহোদয়সহ বর্তমান দপ্তর প্রধান জনাব রওনক জাহানের নাম অন্যতম। সম্মানিত এই কর্মকর্তাগণ প্রত্যেকেই এই কাজটির প্রতি অকুন্ঠ সমর্থন জানিয়েছেন এবং কাজটিকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করেছেন।

“বাউল” ডাটাবেজের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, তাৎক্ষণিকভাবে শ্রোতা অনুরোধের গান/ তথ্য/ অডিও কন্টেন্ট প্রচার করা। কারণ, একজন শ্রোতার দৃষ্টিকোণে, এটিই বেতার কেন্দ্রের যোগ্যতার সর্বোচ্চ মাপকাঠি। এছাড়াও, একটি ব্যবহার বান্ধব বাউল নিশ্চিত করা গেলে অনুষ্ঠান নির্মাণে একজন প্রযোজক কিংবা প্রযোজনা সহকারীকে কখনই শূন্য থেকে শুরু করতে হবে না, বরং কিছুটা এগুনো পথে কাজ শুরু করতে পারবেন। এতে ভবিষ্যতে বেতার অনুষ্ঠানের মান উন্নয়ন সহজতর হবে প্রযোজক নিজ কাজের তথ্য ভান্ডার চাইলেই খুলে দেখতে পারবেন। “বাউল ডেটাবেজ, বেতার অঙ্গনে ভালোর সাথে ভালোর প্রতিদ্বন্দিতা, প্রাাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন এবং কাজের আনন্দ নিশ্চিতকরণে সহায়তা করবে” -মর্মে জানিয়েছেন “বাউল” কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। “বাউল” উদ্ভাবনটি সম্পর্কে আরো সুনির্দিষ্ট ভাবে বলতে গেলে, এটি হচ্ছে অনলাইন ভিত্তিক ডাটা এপ্লিকেশন সিস্টেম। অনলাইন প্ল্যাটফর্মের ডাটাবেজে শুধুমাত্র অডিও কন্টেন্টের তথ্য সাজানো রয়েছে এবং আলাদাভাবে লোকাল কম্পিউটারে সকল অডিও কন্টেন্ট ফোল্ডারে ফোল্ডারে সুবিন্যস্তভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে । ভবিষ্যতে, যদি সকল নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ সম্ভবপর হয়, শুধুমাত্র সেই ক্ষেত্রে অডিও ফাইল ক্লাউড ডাটাবেজে আপলোড এবং সংরক্ষণ করা হবে।
“বাউল” ডেটাবেজের ব্যবহারের ফলে পেশাদারীভাবে অনুষ্ঠান সম্প্রচারে বেশ কিছু সুফল পাওয়া যাবে মর্মে বিশ^াস করেন কার্যক্রমটির সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। যেমন: “বাউল” ডাটাবেজে ডাটা এন্ট্রির ক্ষেত্রে একই সাথে একাধিক ব্যক্তি একাধিক স্থান থেকে ডাটা ইনপুট দিতে পারেন। একই সাথে একাধিক ব্যবহারকারী একাধিক স্থান থেকে প্রচারেয় অনুষ্ঠান সংক্রান্ত ডাটা ব্যবহার এবং ডাইনলোড করতে পারেন। দ্বিতীয়ত, বাউল ডাটাবেজ ব্যবহারকারী নিজের প্রয়োজনমত প্যারামিটার দিয়ে ডাটাবেজের তথ্য সার্চ করতে পারেন এবং প্রাপ্ত তথ্য ইচ্ছে মত প্রিন্ট করে হার্ডকপি সংরক্ষণ করতে পারেন। উদাহরণ স্বরূপ, “স্বাধীনতা দিবসে প্রচারেয় সিনেমার দেশাত্মবোধক গান, যা সকালে প্রচারযোগ্য ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখিত এবং যেটিতে “সোনার বাংলা” শব্দটি আছে, এরকম একটি গান একজন প্রযোজক খুঁজছেন। বাউল সিস্টেমে এই সার্চের উত্তর হচ্ছে, “জীবন থেকে নেয়া” সিনেমার ‘আমার সোনার বাংলা’ গান। এমন নানা ধরণের প্যারামিটার দিয়ে সহজেই প্রয়োজনীয় যে কোনও গান “বাউল” ডাটাবেজের সহায়তায় খুঁজে তাৎক্ষনিকভাবে প্রচার করা যায়।

“বাউল” ডাটাবেজ প্রথম পর্যায়ে শুধুমাত্র গান, প্রচারণা উপকরণ এবং কবিতা নিয়ে কাজ করা হয়েছে। এই সিস্টেমের ফলে ট্রাফিক সম্প্রচার কার্যক্রম, বাংলাদেশ বেতারের প্রতি দিনের প্রচারেয় গানের কিউসীট সহজেই ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রিন্ট করা যায়। এতে করে সময় ও জনবল কমিয়ে যেমন সম্ভব হয়েছে একই সাথে সেবার মানের যথার্থ উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। সর্বোপরি, “বাউল” সিস্টেমটি খুব সহজেই একটি ট্যাব বা স্মার্ট ফোন দিয়ে একজন বেতার উপস্থাপক ব্যবহার করতে পারেন এবং এর সহায়তায় স্টুডিওর লোকাল কম্পিউটারে সংরক্ষিত গান প্রচার করে শ্রোতার তাৎক্ষণিক চাহিদা পূরণ করতে পারেন। একজন আগ্রহী শ্রোতা বা পাঠক বাউল ডেটাবেজ সম্পর্কে অনলাইনে সহজেই বিস্তারিত জানতে পারবেন। এই ক্ষেত্রে মোবাইলে http://bbaul.org/ পেজটি ব্রাউজ করতে পারেন।
-দেওয়ান মোহাম্মদ আহসান হাবীব, উপপরিচালক, বাংলাদেশ বেতার।
পরিচালক (ট্রাফিক) -এর পক্ষে।