সময়ের সঙ্গে থাকার চেষ্টা করছে বেতার
- অনুষ্ঠানে বৈচিত্র্য যোগ করার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ বেতার।
- বাংলাদেশ বেতারের ফেসবুক পাতা ব্যবহার করা হচ্ছে।
- এখন সঞ্চালকেরা বলছেন, ‘এবারের কমেন্টটি করেছেন…।’
শ্রোতাদের চিঠির মাধ্যমে অনুরোধ আসত বেতারে। সেই অনুরোধ থেকেই হতো অনুরোধের আসর। এখন তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ফেসবুক। ফেসবুকে অনুরোধ করেও শোনা যাবে পছন্দসই গান। তার জন্য যেতে হবে শুধু বাংলাদেশ বেতারের ফেসবুক পেজে। চিঠির পাশাপাশি ইউটিউব, ফেসবুকের এই সময়ে বাংলাদেশ বেতারও চেষ্টা করছে সমসাময়িক থাকতে।
একটা সময়ে বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল বাংলাদেশ বেতার। এরপর এফএম রেডিও স্টেশনগুলো চালু হলে ভালো-মন্দ অনুষ্ঠান দিয়ে তারা বেতারকে পেছনে ফেলে দেয়। এখন বাংলাদেশ বেতার এফএম চ্যানেলগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিজেদের পেছন থেকে একটু একটু করে সামনে আনার চেষ্টা করছে। শ্রোতা ধরে রাখতে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছে তারা। এরপর কতটা আধুনিক হতে পারল বেতার?
সম্প্রতি নিজেদের ফেসবুক পাতা ব্যবহার করে অনুষ্ঠানে বৈচিত্র্য যোগ করার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ বেতার। একটা সময় অনুষ্ঠান সঞ্চালকেরা বলতেন, ‘এবারের চিঠিটি এসেছে যশোর থেকে। লিখেছেন…।’ এখন সঞ্চালকেরা বলছেন, ‘এবারের কমেন্টটি করেছেন…।’ চিঠির জায়গা নিয়ে নিয়েছে ফেসবুকের কমেন্ট। শ্রোতাদের এখন আর চিঠি পাঠিয়ে তীর্থের কাকের মতো কয়েক দিন বা সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয় না। একটা কমেন্ট আর মিনিট কয়েকের অপেক্ষা। গানের অনুষ্ঠান ‘ঝংকার শুক্রবার’ কিংবা ‘গানের ডালি’তে শ্রোতারা নিজের পছন্দের গান কিংবা অনুভূতির কথা জানান ফেসবুক পাতায় কমেন্টে কমেন্টে। গতকাল বিকেল পর্যন্ত এই পেজের লাইকসংখ্যা হলো ১ লাখ ২ হাজার ৬৯৪। আর ফলোয়ার হলেন ১ লাখ ২ হাজার ২৬৯ জন।
শাহবাগ থেকে বেতারের প্রধান কার্যালয় এখন আগারগাঁওয়ে আরও বড় পরিসরে। ঝাঁ-চকচকে অবকাঠামোর সঙ্গে চলছে অনুষ্ঠানের মানোন্নয়নও। বেতারের আছে নিজস্ব ওয়েবসাইট। সেখান থেকে এএম ও এফএম দুই মাধ্যমেই পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে লাইভ স্ট্রিমিং শোনার ব্যবস্থা আছে। আছে বেতারের নিজস্ব অ্যাপসও। গুগল প্লেতে অ্যাপসটির রিভিউ দেওয়া আছে ৪.৪। ২৫২ জন রিভিউ করেছেন। অনেকে প্রশংসা করলেও কেউ কেউ আরও ভালো ও হালকা করার কথা বলেছেন।
কথা হলো মহাপরিচালক নারায়ণ চন্দ্র শীলের সঙ্গে। জানালেন, প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে বেতারেরও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। সামনে আরও পদক্ষেপ নেবেন।
প্রধান প্রকৌশলী আহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, বেতারের অ্যাপসটি ব্যবহার করে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে বেতারের লাইভ স্ট্রিমিং শোনা যাবে। এ ছাড়া ঢাকার কেন্দ্র থেকে আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলোতে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ‘নয়েজ’মুক্ত করে অনুষ্ঠান প্রচার করছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের স্পেস ব্যবহারের কথা চলছে। পুরো বেতারমাধ্যমকে এফএমের আওতায় আনারও প্রক্রিয়া চলছে।
এদিকে অনুষ্ঠানের মানও আগের থেকে ভালো হয়েছে বলে জানান উপমহাপরিচালক সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, আগে বেতার কেবল স্টুডিওকেন্দ্রিক ছিল। এখন স্টুডিওর বাইরে দর্শক ও জনগণের অংশগ্রহণে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ধারণ করে প্রচার করা হচ্ছে। ফোন-ইন অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। আগের মতো এখন চিঠির বালাই নেই। মুহূর্তেই এসএমএস করে কিংবা মেইল করে দর্শক অংশগ্রহণ করতে পারেন। এ ছাড়া বিভিন্ন কেন্দ্রের ইউটিউব চ্যানেলও চালু করেছেন মাস কয়েক হলো। একটা অনলাইন রেডিও করারও কথা বললেন তিনি।
কিন্তু সময়ের বদলের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের বিনোদনের রুচিরও পরিবর্তন হয়। বেতার কি এটা নিয়ে ভাবছে? সালাহউদ্দিন বলেন, বেতার শুধু বিনোদন নিয়ে ভাবছে না। এটি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। বেতারের কিছু দায়বদ্ধতাও আছে। বেসরকারি এফএমগুলো শহরনির্ভর। কিন্তু বেতার সারা বাংলাদেশব্যাপী। ঐতিহ্যগত ব্যাপারগুলোও দেখতে হয়। লোকগান, প্রান্তিক মানুষের কথা বলতে হয়। এ কারণে বিনোদন ও শিক্ষণীয়-দুই দিক নিয়ে অনুষ্ঠানগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে।
——————
শরীফ নাসরুল্লাহ, প্রথম আলো, ১১ মার্চ ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ।
[https://www.prothomalo.com/entertainment/article/1447861/সময়ের-সঙ্গে-থাকার-চেষ্টা-করছে-বেতার ]