বেতারে আগ্রহ বাড়ছে তারকাদের

বিনোদনসহ নানা ধরনের অনুষ্ঠান প্রচার করে এক সময় শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয় ছিল বাংলাদেশ বেতার। বেসরকারি চ্যানেলের আবির্ভাব এবং উন্মুক্ত আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে এ রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমটি প্রতিযোগিতায় অনেকটা পিছিয়ে পড়েছিল।

বাংলাদেশের জন্মের আগে মূলত পাকিস্তান বেতারের একটি কেন্দ্র ছিল বাংলাদেশ বেতার। কিন্তু স্বাধীন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র নামে প্রতিষ্ঠানটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ‘বাংলাদেশ বেতার’ নামে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এ প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের পাশাপাশি বেতারও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে শুরু করে। মূলত বেতার দ্রুত মানুষকে তথ্য ও বিনোদন চাহিদা পূরণ করার দিকে নজর দেয়। দেশের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশিরাও বেতার নাটক কিংবা অনুষ্ঠানে ঝুঁকে পড়ে।

এভাবে নাটক, গান, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, সামাজিক সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান প্রচার করে জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয় বেতার। এসব আয়োজনে প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই গুণী তারকা শিল্পীরা অংশ নিতেন।

আশি কিংবা নব্বইয়ের দশকে বেতার নাটক জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করে। এ ধারাবাহিকতার ব্যত্যয় ঘটে একুশ শতকের শুরুর দিকে এসে। এ সময় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সম্প্রচারে আসার পর দেশের বিনোদন অঙ্গনও দীর্ঘায়িত হয়। প্রচুর সংখ্যক নতুন তারকার আগমন ঘটে। এ ছাড়া স্যাটেলাইট সংযোগের কারণে বিদেশি টিভি চ্যানেলও সহজলভ্য হয়ে যায়।

এতে করে বাংলাদেশ বেতার বিশাল সংখ্যক শ্রোতা তখন থেকে হারাতে শুরু করে। তারকারা টেলিভিশনমুখী হয়ে যাওয়ার পর বেতার অনুষ্ঠানও কিছুটা গ্ল্যামারলেস হয়ে পড়ে। কিন্তু গত কয়েক বছর থেকে বেতার অনুষ্ঠান পরিকল্পনায় নতুনত্বের পাশাপাশি তারকা শিল্পীদের নিয়ে নাটক কিংবা অনুষ্ঠান নির্মাণে উদ্যোগী হতে দেখা গেছে।

কিছুদিন আগে থেকে এক সময়ের জ্যেষ্ঠ তালিকাভুক্ত শিল্পীদের নিয়ে নাটক নির্মাণ শুরু করে বেতার কর্তৃপক্ষ। সেই ধারাবাহিকতায় ২৭ বছর বেতার নাটকে আবারও সক্রিয় হয়েছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও সংসদ সদস্য সুবর্ণা মুস্তাফা।

তিনি এখন নিয়মিত বেতার নাটকে অভিনয় করছেন। এ ছাড়া তার সমসাময়িক আফজাল হোসেনও অভিনয় করছেন বেতার নাটকে। সম্প্রতি পুরনোদের অনেকেই ফিরে এসেছেন বেতারে।

তারা হলেন আবুল হায়াত, মামুনুর রশীদ, তারিক আনাম খান, রাইসুল ইসলাম আসাদ, নিমা রহমান, আজিজুল হাকিম, ফজলুর রহমান বাবু, শম্পা রেজা, ওয়াহিদা মল্লিক জলি, চিত্রলেখা গুহ, ডলি জহুর, মাসুম আজিজ, শহীদুল আলম সাচ্চু, বিপাশা হায়াত, রোজী সিদ্দিকী, ত্রপা মজুমদার, আরমান পারভেজ মুরাদ, রওনক হাসান, বন্যা মির্জা প্রমুখ।

এসব অভিনয়শিল্পীর পাশাপাশি গত এক বছরে তালিকাভুক্ত হয়ে কাজ করছেন তমালিকা কর্মকার, নাজনীন হাসান চুমকী, তানভীন সুইটি, মনির খান শিমুল, আজাদ আবুল কালাম, শাহেদ শরীফ খান, হৃদি হক, দীপা খন্দকার, গোলাম ফরিদা ছন্দা প্রমুখ।

বেতার নাটকে অভিনয় করা প্রসঙ্গে অভিনেতা তারিক আনাম খান বলেন, ‘১৯৭৩ সালে বেতারে অভিনয়শিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছিলাম। সেই সময় নিয়মিত কাজ করা হতো।

এরপর অনেক দিন একটানা কাজ করি। নানা কারণে মাঝে দীর্ঘ বিরতি ছিল। আবার নিয়মিত অভিনয় করছি এখন। এ সময়ে কাজের ধরনটাও পরিবর্তন হয়েছে। ভালো গল্প নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। শ্রোতারাও মনে হয় বেতার নাটকে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। আগের মতোই আমরা রিহার্সাল করে নাটকগুলোয় অভিনয় করছি। সব মিলিয়ে বেশ ভালো কাজ হচ্ছে বেতারে।’

অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ বলেন, ‘বেতার প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই এখানে অভিনয় করছি। মাঝে কিছু সময় কাজ করা না হলেও এখন আবারও নিয়মিত অভিনয় করছি। আমাদের সময়ের অনেকেই কাজ করছেন।

পাশাপাশি নতুন শিল্পীরাও আগ্রহ নিয়ে বেতার নাটকে অভিনয় করছে। তাদের সঙ্গে কাজ করতে ভালো লাগছে। এভাবে কাজ চললে অল্প সময়েই বেতার নাটক সেই আগের জায়গায় পৌঁছে যাবে বলে মনে করি।’

বেতার নাটকে তারকাদের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বেতারের উপপরিচালক (নাটক) এবিএম মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা ভালো গল্প নিয়ে নাটক তৈরি করছি। শ্রোতারাও তা গ্রহণ করছেন। আর তারকাশিল্পীদের দিয়েই বেশিরভাগ নাটক নির্মিত হচ্ছে। অভিনয় তারকারাও আগ্রহ নিয়ে আমাদের নাটকে অভিনয় করছেন। সবার সম্মিলিত চেষ্টায় ভালো নাটক শ্রোতাদের জন্য নির্মাণ করাই আমাদের লক্ষ্য।’

প্রসঙ্গত বিভিন্ন জাতীয় দিবস কিংবা উৎসবকালীন বিশেষ নাটক প্রচার হচ্ছে বেতারে। সেই ধারাবাহিকতায় গত পহেলা বৈশাখে বিশেষ নাটক প্রচার হয়েছে এতে। এ ছাড়া আগামী দুই ঈদেই বিশেষ নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচার করবে রাষ্ট্রীয় এ গণমাধ্যমটি।

—————–

সূত্র: যুগান্তর, ২৫ এপ্রিল ২০১৯ খ্রিঃ ( সোহেল আহসান ), প্রিন্ট সংস্করণ।

 প্রচ্ছদ -ফিচার-তারাঝিলমিল-বেতারে আগ্রহ বাড়ছে তারকাদের।
Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply

Copyright © Traffic FM 88.8 MHz, Bangladesh Betar | Site Edited by Deputy Director (Traffic) | Maintained By Director (Traffic) | Supervised By Additional Director General (Programme), Bangladesh Betar | Developed By SA Web Service