বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস

আজ ২রা এপ্রিল। বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক ২০০৭ খিষ্টাব্দের ২রা এপ্রিলকে ‘‘বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস’’ হিসেবে পালনের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এরই ধারাবাহকতায় বাংলাদেশও অটিজম বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি ও অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রতিবছর দিবসটি যথাযথভাবে পালন করে আসছে। অটিজম বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশের একটি জটিল প্রতিবন্ধকতা, যা শিশুর জন্মের দেড় বছর থেকে তিন বছরের মধ্যে প্রকাশ পায়। স্নায়ুতন্ত্রের গঠন ও পরিবর্ধনজনিত ও অস্বাভাবিকতার ফলে সৃষ্ট এ ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সাধারনত শারীরিক গঠনে সমস্যা বা ক্রুটি থাকে না। অটিজমে আক্রান্ত শিশু স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে না। ফলে অটিজম আক্রান্ত শিশুর কথাবার্তা, অঙ্গভঙ্গি ও আচরণ একটি নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ থাকে। আর এ জনই শিশুর মানসিক ও ভাষার উপর দক্ষতা কম থাকে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয়ের তথ্য মতে আমাদের দেশে অটিজম শিশুর সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। দেশের সর্বশেষ আদম শুমারির তথ্যমতে মোট জনসংখ্যার ৯.৭ সতাংশ মানুষ প্রতিবন্ধী। স্বস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক জরিপে জানা যায়, ঢাকায় অটিজম আক্রান্ত শিশুর হার মোট বসতীর প্রায় ৩ শতাংশ।
অটিজম সম্পন্ন শিশুদের বিকাশের যে তিনটি দিক সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেগুলো হলো ভাষা ও যোগাযোগের বিকাশ, সামাজিক বিকাশ এবং আবেগীয় বিকাশ। এ তিনটি ক্ষতি পূরণের জন্য যত দ্রæত সম্ভব প্রাক-প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা প্রয়োজন। এ সমস্ত প্রাক-প্রতিকার মূলক ব্যবস্থার মধ্যে প্রথমেই রয়েছে শিশুর সাথে দৃষ্টি সংযোগ, নিজের নামের প্রতি প্রতিক্রিয়া শেখানোর চেষ্টা এবং শ্রেণীকক্ষে বসে কাজ করার জন্য তাকে প্রস্তুত ও অভ্যাস করানো। অস্থিরতা কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যাভাসের পরিবর্তন এবং সৃষ্টিশীল কাজে উৎসাহিত ও অভ্যস্ত করা এবং দৈনন্দিন জীবনের সাথে খাপ খাওয়াতে যে সমস্ত পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে যেতে হয় সে সম্পর্কে অটিজম আক্রান্ত শিশুকে ধারণা দেয়ারও প্রয়োজন রয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে স্পিচ থেরাপিস্টের সাহায্য নেয়া যেতে পারে। এই প্রাক-প্রতিকার মূলক ব্যবস্থাই অটিজম সম্পন্ন শিশুকে স্বাভাবিক জীবন যাপনে অনুপ্রেরণা যোগাবে। একটি বিষয় আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন, অটিজম সাধারণভাবে নিরাময়যোগ্য নয়, তবে দীর্ঘমেয়াদী নিবিঢ় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিশুর জীবন দক্ষতার উন্নয়ন করানো যায়।
আমাদের সমাজে প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে কাজ করছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্যা কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। তার অক্লান্ত পরিশ্রম, মেধা ও সৃষ্টিশীলতায় অটিজম মোকাবেলায় অনন্য সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু পরিবারের এই গুনী সদস্যের ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায়, অটিজম মোকাবেলা, জন সচেতনতা সৃষ্টিতে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সায়মা ওয়াজেদ বাংলাদেশের অটিজম বিষায়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির চেয়ারম্যান। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ‘‘হু অ্যাক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডে” ভূষিত করেন। এছাড়াও সায়মা ওয়াজেদ দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষে অটিজম বিষয়ক ‘‘শুভেচ্ছা দূত’’ হিসেবে কাজ করছেন ।
একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন নির্ভর করে সেই দেশের প্রতিটি প্রান্তের জনগোষ্টীর আত্মিক, আর্থিক ও সামাজিক উন্নতির উপরে। অটিজম সম্পন্ন শিশুরা এ জনগোষ্টীর বাইরের কেউ নয়। যথাযথ সহযোগিতা, উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা, কার্যকরী শিক্ষা ব্যবস্থা ও যথোপযুক্ত প্রশিক্ষণ অটিজম সম্পন্ন জনগোষ্টীকেও মানবসম্পদ রূপে গড়ে তুলতে পারে। যথোপযুক্ত পরিচর্যা ও পরিবেশ পেলে অটিজম সম্পন্ন শিশুরা বিকশিত হয়ে কর্মক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও স্বীকৃতি আদায় করে পৃথিবীতে চিরস্মরণীয় হতে পারে।
অটিজম সম্পন্ন শিশুদের যথাযথ ভালোবাসা, প্রাক-পরিচর্যা, চিকিৎসা, শিক্ষা ব্যবস্থা, প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাথে এ দেশের বিত্তবানরাও এগিয়ে এলে এসব শিশুই সম্পদ হয়ে দেশ ও জাতীর বিনির্মানে কার্যকারী ভূমিকা পালন করতে পারে।
গ্রন্থনা: ইসমত আরা পলি, ২রা এপ্রিল ২০২১ খ্রিস্টাব্দ, বাংলাদেশ বেতার।