আজ আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস।
আজ আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস। প্রতি বছর ২৯শে এপ্রিল সারা বিশ্বে নানা উৎসব-আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনটি পালিত হয়। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে দিবসটি ইউনেস্কোর স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বিশ্ব নৃত্য দিবস বাংলাদেশে পালিত হয়ে আসছে।
নৃত্য হচ্ছে মানুষের মনোজাগতিক প্রকাশভঙ্গি। প্রত্মতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে প্রাগৈতিহাসিক কালে নৃত্যকলার প্রমাণ পাওয়া যায়। মানুষের প্রকাশভঙ্গির অন্যতম মাধ্যম হিসেবে মানব সভ্যতার প্রথম থেকেই নৃত্যের অবস্থান রয়েছে। খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ সালে মিশরীয় দেয়ালচিত্রে এবং ভারতের গুহাচিত্রে নৃত্যকলার ভঙ্গি উৎকীর্ণ রয়েছে। লিখিত বর্ণমালা প্রচলনের আগে এই পদ্ধতির মাধ্যমে বিভিন্ন গল্প বংশ পরম্পরায় চলে আসত।
১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৯শে এপ্রিল বিশ্বখ্যাত নৃত্যশিল্পী ও নৃত্য সংস্কারক জিন জর্জেস নভেরা জন্মগ্রহণ করেন। নৃত্য শিল্পী নভেরার স্মৃতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে প্যারিসভিত্তিক আন্তর্জাতিক নৃত্য পরিষদ প্রতি বছর ২৯শে এপিল আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তাই নৃত্য শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশে নভেরার অবদান অনবদ্য মর্যাদায় স্বীকৃত।
১৭৬০ খ্রিষ্টাব্দে নভেরা রচনা করেন, ‘লেটারস অন দ্য ড্যান্স’ গ্রন্থ। এ গ্রন্থে ব্যালে নৃত্যের ব্যাকরণ ও উপস্থাপনা বিষয়ে আলোচনা স্থান পেয়েছে। নভেরা ব্যালে রচনার পাশাপাশি ব্যালের বিন্যাস, নির্দেশনা, পোশাক সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন। সেসব রীতি আজও বহাল আছে। ব্যালে আবিষ্কার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ব্যালে আমার অবিরাম পড়াশোনা, নিরীক্ষা ও কর্মৎপরতার ফসল’। আমি ব্যালে নৃত্যের সামান্য উন্নতির কথা ভেবেছিলাম, যা মানুষের শিল্পরুচিতে প্রভাব ফেলেছিল। কিন্তু সে সময় আমার চিন্তা অনেকেই অমানবিকভাবে গ্রহণ করেছিল। ব্যালের শেক্সপিয়ার হিসেবে পরিচিত নভেরার মোট কম্পোজিশন ১৫০টি। ওই সময় তাঁর কম্পোজিশন পৃথিবীব্যাপী আলোড়ন তুলেছিল।
শরীর, ছন্দ, আত্মা, মন ও সংগীত-এসব নিয়ে নান্দনিক ছন্দিত শরীরী প্রতিমাই হলো নৃত্য। তাইতো নৃত্য সম্পর্কে কিংবদন্তি নৃত্যশিল্পী মার্থা গ্রাহাম বলেছেন, ‘নৃত্য হলো লুকিয়ে থাকা আত্মার ভাষা’। পন্ডিত বিরজু মহারাজ বলেছেন, ‘নৃত্য হলো প্রকৃতি’। হৃৎপিন্ডের ধুক-ধুক শুনলেই বোঝা যায়, সে তার নিজস্ব ছন্দে নাচছে। নৃত্য হচ্ছে গুরুমুখী বিদ্যা। এই বিদ্যা অর্জন করতে পারলেই হওয়া যায় একজন শিল্পীমনা মানুষ। শাস্ত্রীয় নৃত্য ও সংগীত মিলে মন ও আত্মার মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করে। নৃত্য খুব সহজেই সবার কাছে পৌছায় ও গ্রহণযোগ্যতা পায়। নৃত্যের মাধ্যমে সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হয়, মানুষে মানুষে বিনিময় ঘটে, কথা হয়। নৃত্য এমনই একটা মাধ্যম, যা আমাদের আশা-আকাঙ্খাকে একটা আকৃতি দেয়। দুঃসময়ে-দুর্দিনে নৃত্য ও অন্যান্য উপস্থাপনকলা মানুষের মনে আনন্দ বিতরণ করে। সময়, চর্চা, অভিজ্ঞতা, বোধ- উপলব্ধি যত ঋদ্ধ হবে, নৃত্যের অভিব্যক্তিও তত সুন্দর হবে।
আজকের এই দিনে প্রাচীন এই কলাটির চিরায়ত ঐতিহ্য স্মরণ করি, সবাইকে কাছে টানার এবং একত্রীকরণের অসম্ভব শক্তিকে সাদরে বরণ করে নিই। আজকের এই দিনে যাঁরা নৃত্যের সৌন্দর্য ও এর অর্ন্তনিহিত শক্তিকে বুঝতে পেরেছেন, ভালোবেসেছেন, তাঁদের সবার প্রতি আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবসের শুভেচ্ছা রইল।