বন্যা সংশ্লিষ্ট বার্তা সংকলন

ট্রাফিক সম্প্রচার কার্যক্রম
বাংলাদেশ বেতার
[বন্যা পূর্ববর্তী, বন্যাকালীন ও বন্যা পরবর্তী সময়ে প্রচার যোগ্য বার্তা সংকলন]।

[শুধুমাত্র অধিবেশন তত্বাবধায়কের অনুমাদনক্রমে প্রচারযোগ্য]

——————————————————————————————————————-

প্রচার তারিখ:

প্রচার নির্দেশনা:

—————————————————————————————————————–

 

১। বন্যা মোকাবেলায় পূর্ব সতর্কতা:

প্রিয় শ্রোতা, বন্যার সময় খাদ্যসহ নানা সংকটের পাশাপাশি দেখা দেয় সংক্রামক অনেক রোগ-ব্যাধি। এই সময়ে বিশুদ্ধ পানির অভাবে স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড, চর্মরোগ, চোখের অসুখ এই জাতীয় সমস্যা বন্যার সময়ে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাই জনসাধারণের কিছু উপায় জেনে রাখা প্রয়োজন।

১. বন্যায় যদি ঘরবাড়ি ডুবে যায়, নিকটস্থ কোন উঁচু স্থানে বা বাঁধে অথবা আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণ করুন।

২. নিজ বসতবাড়িতে অবস্থান করা সম্ভব না হলে বাড়ির কাছাকাছি কোথাও অবস্থান করুন।

৩. প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ঘরের চালের নিচে পাটাতনে রাখার ব্যাবস্থা করুন।

৪. কোন মতেই দালাল বা দুষ্টু লোকের পরামর্শ শুনে নিজ গ্রাম ছেড়ে পরিবার পরিজনসহ শহরে যাবেন না।

৫. নিজ গ্রামে থাকা কোনমতেই সম্ভব না হলে, পার্শ্ববর্তী গ্রামসমূহে, যা বন্যা কবলিত নয়, আশ্রয় গ্রহণ করুন বা সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক স্থাপিত আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণ করুন।

৬. টিউবওয়েলের পানি পান করুন। টিউবওয়েলের পানি পাওয়া না গেলে পানি ফুটিয়ে পান করুন অথবা পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বা ফিটকিরি ব্যাবহার করুন।

৭. আপনার ঘরে রক্ষিত কার্বলিক এসিড এর বোতলের ছিপি খুলে রাখুন। এতে সাপ আপনার ঘরে ঢুকবে না।

৮. সরকারি ও বেসরকারি ত্রাণ বণ্টনকারীদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করুন।

৯. ত্রাণসামগ্রী যা পাওয়া যায় তা দিয়ে অভাব মিটানোর চেষ্টা করুন।

১০. বন্যার পরেই কিভাবে বন্যাকবলিত এলাকায় ফসল ফলানো যায়, তার চিন্তাভাবনা করুন। এ বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

১১. বন্যাকবলিত এলাকার দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা কমিটির সাথে যোগাযোগ করে প্রতিটি বন্যা কবলিত গ্রামের নিরাপত্তা রক্ষার্থে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করুন এবং নিজ নিজ সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।

১২. ফসলের বীজ নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ করুন।

১৩. প্লাবিত পুকুর বা দিঘিতে ডালপালা ফেলে মাছ ধরে রাখার ব্যাবস্থা করুন।

১৪. বন্যার আগেই রান্নাবান্নার জন্য আলগা চুলা ও জ্বালানি জোগাড় করে রাখুন।

১৫. অতিরিক্ত বন্যায় যাতে বাচ্চারা কষ্ট না পায় সেইজন্য আগে থেকেই নিরাপত্তা আশ্রয় হিসেবে আত্নীয় বা প্রতিবেশীর বাড়ি আশ্রয় কেন্দ্র হিসাবে চিহ্নিত করে রাখুন।

১৭. গর্ভবতী নারীর জন্য নিরাপদ আশ্রয় ঠিক করে রাখুন এবং স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন। বাড়িতে নিরাপদে সন্তান প্রসবের উপকরণ জোগাড় করে রাখুন।

১৮. বন্যার সময়ে সম্ভাব্য মেয়েলি রোগ-ব্যধি প্রতিকারের জন্য বন্যার আগে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক, ডাক্তার, সরকারি, বেসকারি সংস্থার স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ নিন এবং সেই মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

১৯. চলাফেরার জন্য ছোট ডিঙ্গি নৌকা বা কলাগাছের ভেলা তৈরির জন্য বাড়িতে পর্যাপ্ত পরিমাণে কলাগাছ লাগান।

————————————————————————————–

 

২। বন্যা সময়কালীন করণীয় কিছু জরুরী কাজ:

১) যেহেতু বন্যায় পানির উৎস সংক্রমিত হয়ে যায় তাই পানি ভালোমতো না ফুটিয়ে পান করা নিরাপদ নয়। টিউবওয়েলের পানিও ফুটিয়ে পান করতে হবে। পানি ফুটানোর ব্যবস্থা না থাকলে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ব্যবহার করতে হবে।

২) ডায়রিয়া দেখা দিলেই পরিমাণমতো খাবার স্যালাইন খেতে হবে। যেসব স্বাস্থ্যকর্মী বন্যার্তদের সাহায্যে নিয়োজিত রয়েছেন তাদের কাছে পর্যাপ্ত স্যালাইন যোগাড় করতে পারেন। যদি পাতলা পায়খানা ও বমির মাত্রা বেড়ে যায় সে ক্ষেত্রে শিরা পথে স্যালাইন দিতে হবে।

৩) মল ত্যাগের ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যেখানে সেখানে মল ত্যাগ করার ফলে কৃমির সংক্রমণ বেড়ে যায়। একটি নির্দিষ্ট স্থানে মল ত্যাগ করতে হবে এবং মল ত্যাগের পর সাবান বা ছাই দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। মল ত্যাগের সময় কখনো খালি পায়ে থাকা চলবে না। কেননা বক্রকৃমির জীবাণু সর্বদা খালি পায়ের পাতার ভেতর দিয়ে শরীরে সংক্রমিত হয়। এ সময় বাসার সবাইকে এক ডোজ কৃমির ওষুধ খেতে হবে। তবে দু’বছর বয়সের নিচে কাউকে কৃমির ওষুধ খাওয়ানো নিরাপদ নয়।

৪) খাবার গ্রহণে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। খাবার যাতে পঁচে না যায়, সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

৫) বন্যায় চর্মরোগ হতে পারে। যতটা সম্ভব শরীর শুকনো রাখতে হবে। একই গামছা বা তোয়ালে অনেকজন ব্যবহার করবেন না।

৬) চোখের প্রদাহ হলে নিজেকে অন্যদের কাছ থেকে গুটিয়ে রাখুন। কেননা, সমস্যাটি ভাইরাসজনিত হলে তা অন্যদের মাঝেও সংক্রমিত হবে। ক্লোরাম ফেনিকল আই ড্রপ হাতের কাছে রাখতে হবে। নিকটস্থ স্বাস্থ্যকর্মী বা চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে তা ব্যবহার করতে হবে। চোখে অন্য কোনো সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

৭) বন্যায় মশার উপদ্রব বেড়ে যায়। ব্যাপক মশা নিধনের ব্যবস্থা না করলে ম্যালেরিয়া হতে পারে।

প্রিয় শ্রোতা, মনে রাখবেন, বন্যা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের একটি অংশ। এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে মোকাবেলা করতে হলে, আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রয়াস একান্ত প্রয়োজন।

————————————————————————————–

 

৩। বন্যা পরবর্তী সময়ে করণীয়:

১. বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথা সাথে নিজ ভিটা বাড়িতে ফিরে যান।

২. বাড়িঘর বসবাসযোগ্য করুন এবং বাড়িতে নানা ধরনের শাকসবজি চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করুন।

৩.নিজ জমি চাষাবাদের উদ্যোগ গ্রহণ করুন। কৃষি কর্মীদের সাথে আলোচনাক্রমে স্বল্প সময়ে উৎপাদনযোগ্য ফসলের চাষ করুন।

৪. এককভাবে ঋণের চেষ্টা না করে যৌথভাবে ঋণ গ্রহণের প্রচেষ্টা চালালে ভাল ফল পাওয়া যেতে পারে।

৫. বন্যার পর পরই নানা রকম রোগ (টাইফয়েড, ডাইরিয়া, আমাশয় ইত্যাদি) দেখা দিতে পারে। তাই রোগ প্রতিষেধক টিকা বা ইনজেকশন নিন।

৬. ঘরবাড়ি পুনর্র্নিমাণে সাহায্যের জন্য স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করুন।

৭. ঘরবাড়ি পুনর্র্নিমাণের জন্য কোন সরকারি সাহায্য (টিন) পাওয়া যাবে কিনা সে সম্বন্ধে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সাথে যোগাযোগ রাখুন। এ ব্যাপারে যৌথভাবে প্রচেষ্টা চালালে ভাল হয়।

৮. বন্যার পানি নামার সাথে সাথে ক্ষতিগ্রস্থ দিঘি বা ঘেরের পাড় মেরামত করে পুকুরে জাল টেনে চাষকৃত মাছ আছে কিনা দেখে পরবর্তীতে শতাংশে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করে পুনরায় মাছের পোনা ছেড়ে চাষ শুরু করতে পারেন।

৯. প্রয়োজনীয় পরামর্শের জন্য উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। সম্ভব হলে মাছ চাষের জন্য ঋণ গ্রহণের লক্ষে মৎস্য কর্মকর্তার সহায়তা গ্রহণ করতে পারেন।

১০. আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত রোপা আমন ধানের বীজতলা পানি দিয়ে পাতায় জমে থাকা পানি বা কাঁদা ধুয়ে দেয়া যেতে পারে এবং পাতা শুকানোর পর কিছু ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা যেতে পারে।

১১. রোপা আমন ধানের চারার সঙ্কট হলে ইতোপূর্বে রোপনকৃত ভাল জমি থেকে প্রতি গোছায় দু’ একটি কুশি ভেঙে নতুন জমিতে রোপন করতে পারেন।

————————————————————————————–

Print Friendly, PDF & Email

Copyright © Traffic FM 88.8 MHz, Bangladesh Betar | Site Edited by Deputy Director (Traffic) | Maintained By Director (Traffic) | Supervised By Additional Director General (Programme), Bangladesh Betar | Developed By SA Web Service